হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বর্জনীয় ১০ টি কাজ
by CIRT Team
মোবাইল ফোন বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে স্মার্টফোন সবার হাতেই। স্মার্টফোন ব্যবহারে একে অপরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে বেশ বৈচিত্র এসেছে। মোবাইলের ব্যবহার আগের মত শুধু কল করা বা মেসেজ আদান প্রদানেই সীমাবদ্ধ নেই। অনেকগুলো সফটওয়্যার এখন স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হয়। হোয়াটসঅ্যাপ তাদের মধ্যে অন্যতম। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং-এর মূলধারনা থেকে আবির্ভাব হলেও বর্তমানে বিশ্বব্যপী বহুল প্রচলিত যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে কিছু বিষয়ের প্রতি খুব যত্নবান হতে হবে যাতে করে আমরা পরবর্তীতে কোন রকম সাইবার ঝুঁকিতে না থাকি। আসুন জেনে নেই কি বিষয়ে সচেতন হতে হবে,
- কন্টাক্ট লিস্টের সবাইকে হোয়াটসঅ্যাপে কানেক্ট না করা
আজকাল স্মার্টফোনে আগের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক কন্টাক্ট সংরক্ষণ করে রাখা যায়। হোয়াটসঅ্যাপ সরাসরি ফোন কন্টাক্টের এক্সেস নিয়ে থাকে। হোয়াটসঅ্যাপের বর্তমান নীতি অনুযায়ী যে কোন ব্যক্তির কাছে আপনার কন্টাক্ট নাম্বার থাকা মাত্রই সে চাইলেই আপনার সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করতে পারবে। এক্ষেত্রে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে যে কার সাথে আমরা হোয়াটসঅ্যাপে কানেক্ট থাকতে চাই বা যোগাযোগ করতে চাই। অনেক অপ্রয়োজনীয় নাম্বারও কন্টাক্ট লিষ্টে থাকতে পারে, বা অনেক পুরনো কেউ যার সাথে বর্তমানে তেমন একটা যোগাযোগ নেই। সেক্ষেত্রে এসব কন্টাক্ট ডিলিট করে দেয়া বা তাদেরকে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করতে না দেয়াই উত্তম।
- প্রোফাইলের ছবির নির্বাচনে সচেতন হওয়া
হোয়াটসঅ্যাপেও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার মত প্রোফাইল ছবি দেয়া যায়। প্রোফাইলের ছবি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ যাতে প্রোফাইলের ছবি পরবর্তিতে আপনাকে কোন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না ফেলে। প্রোফাইলের ছবি নিজের বা কর্মক্ষেত্রের খুব সাধারন কোন ছবি হওয়া উচিৎ। প্রোফাইলের ছবিটি যদি সবার (Public) জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া থাকে তাহলে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে ছবিটি হোয়াটসঅ্যাপে সংযুক্ত যে কারও দৃষ্টিতে আসতে পারে।
- দুই-স্তরের (2FA) ভেরিফিকেশন পদ্ধতি চালু করা
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই দুই-স্তরের (2FA) ভেরিফিকেশন পদ্ধতি চালু রাখা উচিৎ যাতে ব্যবহারকারীর অগোচরে অন্য কেউ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে অন্য কারও সাথে যোগাযোগ করতে না পারে। সাধারণত ফোন নাম্বার ব্যবহার করে আপনার ফোন ব্যতিত অন্য ফোনে অথবা কম্পিউটারে হোয়াটসঅ্যাপ লগইন করার চেষ্টা করা যায়, সেক্ষেত্রে এই দুই-স্তরের (2FA) ভেরিফিকেশন পদ্ধতির সুবাদে এই ধরনের অননুমোদিত লগইন গুলো ঠেকানো সম্ভব।
- স্ট্যাটাস মেসেজ পাবলিক শেয়ার না করা
অনেকেরই হয়তো জানা না-ও থাকতে পারে যে, হোয়াটসঅ্যাপে স্ট্যাটাস মেসেজ দেয়া যায় যা কিনা ভুল সেটিংসের কারণে পাবলিক মেসেজ হিসেবে সকলের কাছে উন্মুক্ত থাকতে পারে। এটা না করে সেটিংসগুলো পরিবর্তন করে স্ট্যাটাস মেসেজগুলো শুধুমাত্র পরিবার, বন্ধু বা যারা হোয়াটসঅ্যাপে কানেক্ট আছেন তাদের জন্য উন্মুক্ত করা যেতে পারে।
- হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সবাইকে সযুক্ত করার সুযোগ না রাখা
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয় দিক হলো বিভিন্ন গ্রুপ এবং সেসব গ্রুপের আলোচনা। ভিন্ন ভিন্ন কাজের প্রেক্ষিতে কয়েকজন মিলে একটি গ্রুপ তৈরি করা যায়, যেসব গ্রুপের আলোচনা শুধুমাত্র গ্রুপের সদস্যদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু কাওকে যে কোন গ্রুপে এড করার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। নতুবা বিব্রতকর পরিস্থিতেও পড়তে হতে পারে। হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি সেটিংসে গিয়ে Who can add me to groups এ ৩টি অপশন পাওয়া যায়, যেমন, Everyone বা My Contacts বা My Contact Except; এর মধ্যে অবশ্যই Everyone অপশনটা বাদ দিয়ে বাকি অপশনগুলোর মধ্যে নির্বাচন করা উত্তম।
- শেয়ারকৃত ফাইল সমূহ সরাসরি হ্যান্ডসেটে ডাউনলোড না করা
হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলা বা মেসেজ আদান প্রদানের বাইরেও প্রয়োজনীয় ফাইল শেয়ার করা যায়। এসব ফাইল যেন সরাসরি ফোন মেমরীতে সেভ না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। ডিফল্ট সেটিংস অনুযায়ী হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ারকৃত ছবিগুলো সরাসরি ফোন গ্যালারীতেই সেভ হয়। শেয়ার করা ফাইল ব্যবহারকারীর অনুমতি সাপেক্ষে ফোন মেমরীতে সেভ হতে হবে। তা না হলে অনেক অপ্রয়োজনীয় বা অপ্রত্যাশিত ফাইল আপনার ফোনে সেভ হতে থাকবে। এতে করে ফোনের স্টোরেজ যেমন বেশি ব্যবহৃত হবে তেমনি অপ্রত্যাশিত ফাইলের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে পড়াও অসম্ভব নয়।
- ক্লাউড স্টোরেজে অটো ব্যাকআপ না করা
হোয়াটসঅ্যাপের সকল তথ্য ক্লাউডে অটোমেটিক ব্যাকআপ না রাখাই উত্তম, নতুবা ক্লাউডের মূল্যবান স্টোরেজ ব্যবহৃত হতে থাকবে। বরং প্রয়োজনীয় ব্যাকআপটুকু ক্লাউডে রাখার চর্চা করতে হবে, এতে ক্লাউড স্টোরেজ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হবে।
- আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও শেয়ার না দেয়া
হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কোনরকম আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা অনুচিৎ। যেহেতু আমাদের দেশে পর্নগ্রাফি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাই এ সংশ্লিষ্ট কোন ভিডিও, ছবি বা অডিও ফাইল অন্যের সাথে শেয়ার করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেই গন্য হবে। কেউ যদি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে পর্নগ্রাফি শেয়ার করে তাহলে যিনি এটি রিসিভ করছেন তিনি চাইলে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারেন।
- ভিত্তিহীন খবর বা গুজব না ছড়ানো
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে কোন ভিত্তিহীন খবর খুব সহজেই বিশ্বের যে কোন প্রান্তে পৌছে যেতে পারে। যার প্রেক্ষিতে কোন এলাকা বা প্রতিষ্ঠানের বা দলের ব্যক্তিবর্গের মাঝে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে। যেহেতু কোন রকম গুজব রটানোর প্রেক্ষিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন সেহেতু হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই তথ্য শেয়ার করা উচিৎ।
- অন্যের নামে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার না করা
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের সময় ব্যবহারকারীর নাম সেট করে নিতে হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই অন্যের নাম ব্যবহার করা বর্জনীয়। দুষ্কৃতিকারীরা অনেকেই ভিন্ন নামে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে থাকে। এতে করে বিভ্রান্তির সৃষ্ট হয়। এজন্য অবশ্যই নিজ নামেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা উচিৎ।
রুবাইয়াত বিন মোদাচ্ছের
কনসালটেন্ট, বিজিডি ই-গভ সার্ট