ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স-এ বাংলাদেশের ৭৩ তম স্থান লাভ এবং কিছু প্রাসংগিক কথন
by CIRT Team
ইতমধ্যেই হয়ত নিউজ এবং প্রিন্টিং মিডিয়ার সুবাদে আপনি জেনে গিয়েছেন যে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স এ বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৭৩। এই ব্যপারে বিস্তারিত ধারণা দিতেই এই লেখার অবতারণা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে এবং ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সরকারের নানামূখি পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের সকল সেবা-পরিসেবা যেমন ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে সাইবার আক্রমন ঝুকির সম্ভাবনাও। এই ঝুঁকি প্রতিরোধে এবং বাংলাদেশ সরকারের ই-গভার্নেন্স কে সুরক্ষিত রাখতে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ই-গভার্নমেন্ট কম্পিউটার ইন্সিডেণ্ট রেসপন্স টিম কিনবা BGD e-GOV CIRT। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সাইবার অংগনে দেশকে নেতৃত্ব দেয়া এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, ফোরাম এবং সংস্থার সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে সাইবার সূচক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স এর সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং তাদেরকে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হয়। তথ্যাবলী যাচাই বাছাই করার পর উক্ত প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ ইনডেক্সে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স হল একটি বিশ্বব্যাপী সূচক, যা সাইবার হুমকি প্রতিরোধ ও সাইবার অপরাধ মোকাবেলা করার জন্য দেশগুলির প্রস্তুতি এবং গৃহিত ব্যবস্থাসমূহের পরিমাপ করে। ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স সকলের জন্য উন্মুক্ত প্রমান, উপাত্ত ও তথ্যাবলীর একটি ডাটাবেজ এবং একই সাথে সাইবার সিকিউরিটি সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স যেকোন দেশের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি পরিস্থিতি এবং গৃহিত উদ্যোগসমূহ সম্পর্কে নির্ভুল এবং হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করে। পাচটি ধাপে এই সূচক তৈরী করা হয়ঃ
- জাতীয় পর্যায়ের সাইবার হুমকি সনাক্তকরণ
- জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সক্ষমতা সনাক্তকরন
- গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিমাপযোগ্য বিষয়াদির নির্বাচন
- সাইবার নিরাপত্তা সূচকসমূহের উন্নয়ন
- সাইবার সিকিউরিটি সূচকগুলিকে তাদের বিষয় অনুযায়ী বিন্যাস করা।
এনসিএসআই সংলিষ্ট দেশের সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত সাইবার নিরাপত্তার নিম্নোক্ত পরিমাপযোগ্য দিকগুলি নিয়ে কাজ করে:
- সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে বিদ্যমান আইনসমূহঃ আইনী আইন, প্রবিধান, আদেশ ইত্যাদি।
- সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করার নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত ইউনিট/প্রতিষ্ঠানঃ বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, ইত্যাদি।
- সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করার ব্যপারে বিভিন্ন বিভাগ/প্রতিশঠানের মধ্যে পারষ্পরিক সহযোগিতার পদ্ধতিঃ কমিটি, ওয়ার্কিং গ্রুপ, ইত্যাদি
- সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে গৃহিত উদ্যোগসমূহের ফলাফলঃ নীতি, সাইবার অনুশীলন, প্রযুক্তি, ওয়েবসাইট, প্রোগ্রাম ইত্যাদি
ছবিসূত্রঃ এনসিসিআই ওয়েবসাইট
এনসিএসআই কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স এ ৭৩ তম অবস্থানে আছে। একই সংস্থার তথ্যমতে গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৩ তম।
ছবিসূত্রঃ এনসিসিআই ওয়েবসাইট
এনসিএসআই এর তথ্যানুযায়ী সাইবার ইন্সিডেন্স রেসপন্স, সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় পুলিশের সক্ষমতা এবং সামরিক বাহিনির সাইবার সক্ষমতায় বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখযোগ্য। এ প্রসংগে সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগসমূহ যেমন, BGD e-GOV CIRT প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির কথা আলাদাভাবে বলতেই হয়।
ছবিসূত্রঃ এনসিসিআই ওয়েবসাইট
বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া ক্ষেত্রসমূহ হচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তা পলিসি, সাইবার থ্রেট এনালাইসিস, গুরুত্বপূর্ণ ই-সেবা সমূহের সুরক্ষা, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নীতিমালা ইত্যাদি। এই পিছিয়ে পড়া ক্ষেত্রসমূহের উন্নতির লক্ষ্যে ইতমধ্যেই বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’র খসড়া ইতমধ্যেই অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা যার বাস্তবায়নে সাইবার নিরাপত্তা পলিসি, গুরুত্বপূর্ণ ই-সেবা সমূহের সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এই তিনটি ক্ষেত্রে মানোন্নয়ন ঘটবে। বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর অধিনে চলমান লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ এমপ্লয়মেন্ট এন্ড গভার্নেন্স প্রকল্পের আওতায় ১৫ টি সরকারী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহে সাইবার সেন্সর স্থাপনের কাজ চলমান আছে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের ফলে সাইবার থ্রেট এনালাইসিস এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবাসমূহের সুরক্ষা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে BGD e-GOV CIRT এর সাইবার থ্রেট এনালাইসিস এর জন্য একটি ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। যার সুফল অচিরেই পাওয়া যাবে। এছাড়াও বর্তমানে “ডেভেলেপমেন্ট অফ সাইবার সিকিউরিটি স্ট্রাটেজি, এসেসমেন্ট অফ ক্রিটিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার, প্রোভিশন অফ সেলফ এসেসমেন্ট টুলকিট” নামে একটি প্রকল্প চলমান আছে। সরকারের নেয়া এই প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন হয়ে গেলে সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের ব্যপক উত্তরন ঘটবে। এ বিষয়ে একটি কথা বলে রাখা ভালো, এশিয়ার দেশসমুহের মধ্যে শ্রীলংকা সর্বপ্রথম সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ শুরু করলেও এই ইনডেক্সে তাদের ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ (শ্রীলংকার অবস্থান ৭৭)। এই অর্জন গর্ব করার মতই।
বর্তমান সরকারের হাতে নেয়া কার্যকরী উদ্যোগ এবং প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বহুদূর। পরবর্তী বছরের সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশের উন্নতি যে বেশ বড়সড় হবে সেকথা এখনই নিশ্চিন্তে বলে দেয়া যায়। এই সাফল্যের পেছনে থাকা প্রত্যেকটি মানুষ একটি আন্তরিক ধন্যবাদ পেতেই পারেন! সবচেয়ে বড় ধন্যবাদটি নিঃসন্দেহেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রাপ্য।
খবরের লিংকঃ
- http://www.theindependentbd.com/post/151913
- https://www.dhakatribune.com/technology/2018/05/29/bangladesh-ranks-73-in-global-cyber-security-index
- https://www.thefinancialexpress.com.bd/national/bd-ranks-73-in-global-cyber-security-index-1527591275
- http://daily-sun.com/home/printnews/312167
- http://www.observerbd.com/eobserver/2018/05/30/index.php
- http://epaper.newagebd.net/30-05-2018/13
- http://www.thebangladeshpost.com/national/29528/pdf
- http://en.ntvbd.com/bangladesh/168639/Bangladesh-ranks-73-in-global-cyber-security-index
- http://samakal.com/todays-print-edition/tp-khobor/article/18055711/সাইবার-নিরাপত্তা-সূচকে-বাংলাদেশ-৭৩তম